অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয় ? অনিয়মিত মাসিক এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। এর ফলে মাসিক চক্রের সময় পরিবর্তিত হতে পারে বা কখনো চক্র সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে পারে। এখানে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কিছু সাধারণ কারণ তুলে ধরা হলো:

অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয়


১. হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা:

  • থাইরয়েড সমস্যাগুলি: থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক কার্যকারিতা (হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম) মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এটি একটি সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা যা ওভারি সঠিকভাবে কাজ করতে না দেওয়ার ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ হতে পারে।
  • প্রোলাক্টিনের উচ্চ স্তর: প্রোলাক্টিন হরমোনের মাত্রা বেশি হলে মাসিক চক্রে পরিবর্তন হতে পারে।

২. ওজনের পরিবর্তন:

  • ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া: হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইস্ট্রোজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
  • খাদ্যাভ্যাস: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টির অভাব মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলে।

৩. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ:

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের হরমোন নিঃসরণকে প্রভাবিত করতে পারে, যা মাসিক চক্রকে অনিয়মিত করে তুলতে পারে।

৪. বেশি শারীরিক পরিশ্রম:

  • উচ্চ মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম বা ভারী ব্যায়াম শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটায়, যা মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলে।

৫. গর্ভনিরোধক পদ্ধতি:

  • গর্ভনিরোধক ওষুধ বা হরমোনাল কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহার মাসিক চক্রের সময়সূচি পরিবর্তন করতে পারে। ইমপ্ল্যান্ট বা ইনজেকশনও মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলে।

৬. জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রভাব:

  • কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বন্ধ করার পর মাসিক চক্রের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগতে পারে।

৭. বয়ঃসন্ধি এবং মেনোপজ:

  • বয়ঃসন্ধির সময় হরমোনের পরিবর্তন এবং মেনোপজের পূর্বাবস্থা (পেরিমেনোপজ) অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ হতে পারে।

৮. জেনেটিক সমস্যা:

  • কিছু মহিলার ক্ষেত্রে জেনেটিক সমস্যার কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।

৯. অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা:

  • ডায়াবেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • এন্ডোমেট্রিওসিস: এটি একটি গাইনি সমস্যা যেখানে জরায়ুর বাইরের টিস্যু জরায়ুর মতো আচরণ করে, যা অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ হতে পারে।

লক্ষণ:

  1. সময়ে পিরিয়ড না হওয়া: সাধারণত ২১-৩৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ড হওয়া উচিত। এর বাইরে হলে তা অনিয়মিত হিসেবে গণ্য হয়।
  2. অস্বাভাবিক রক্তস্রাব: অত্যধিক বা অল্প রক্তস্রাব।
  3. পিরিয়ডের সময়ের তারতম্য: মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পিরিয়ড শুরু হওয়া।
  4. পিরিয়ডের দিন সংখ্যা পরিবর্তন: বেশি বা কম দিন ধরে পিরিয়ড থাকা।

প্রতিকার:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত সবজি, ফলমূল ও পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
  2. ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা পায়।
  3. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ: সুস্থ ওজন বজায় রাখা।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ: বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো ও ওষুধ গ্রহণ।

পরামর্শ: অনিয়মিত ঋতুস্রাব যদি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে থাকে, তবে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

About ফাহাদ মজুমদার

Check Also

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, কারণ উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *