দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ কী এবং দোয়া কিভাবে করলে কবুল হবে?

দোয়া কবুল না হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এবং ইসলামে এ সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সর্বদা বান্দার দোয়া শোনেন, তবে কিছু শর্ত পূরণ না হলে দোয়া কবুল হতে বিলম্ব হতে পারে বা হয়তো অন্য কোনোভাবে তা গ্রহণ করা হয়। এখানে দোয়া কবুল না হওয়ার সম্ভাব্য কিছু কারণ এবং দোয়া কিভাবে করলে কবুল হতে পারে তা আলোচনা করা হলো:

দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ:

  1. হারাম উপার্জন বা খাওয়া: যদি কেউ হারাম পথে উপার্জন করে বা হারাম কিছু খায় বা পান করে, তবে তার দোয়া কবুল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। হাদিসে এসেছে, হারাম উপার্জনের ফলে দোয়া কবুল হয় না।
  2. আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের অভাব: দোয়া করার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকা জরুরি। যদি কেউ মনে মনে সন্দেহ পোষণ করে যে দোয়া কবুল হবে কিনা, তাহলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা কমে যায়।
  3. অধৈর্য হওয়া: দোয়া করার পর ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত। অনেকেই দ্রুত ফলাফল না পেয়ে দোয়া বন্ধ করে দেন, যা দোয়া কবুলের একটি প্রধান অন্তরায় হতে পারে।
  4. গুনাহের প্রতি অনুতপ্ত না হওয়া: যারা পাপের ওপর থেকে নিজেদের ফিরিয়ে আনেন না এবং অনুতপ্ত হন না, তাদের দোয়া কবুলে বিলম্ব হতে পারে। পাপ থেকে তাওবা করা দোয়া কবুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  5. অবৈধ ও অনৈতিক কিছু চাওয়া: ইসলামে অবৈধ বা অন্যায় কিছু চাইলে দোয়া কবুল হয় না। যেমন অন্য কারও ক্ষতি কামনা করা বা পাপাচার কামনা করা।
  6. বাধ্যতামূলক আমল পরিত্যাগ করা: যারা নামাজ, রোজা বা অন্যান্য ফরজ ইবাদত পালনে অবহেলা করে তাদের দোয়া কবুল হতে দেরি হতে পারে।

দোয়া কবুলের উপায়:

  1. দোয়ার আগে তাওবা করা: গুনাহ থেকে পরিপূর্ণভাবে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে এবং শুদ্ধ মনে দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  2. হালাল উপার্জন ও খাদ্য গ্রহণ করা: হালাল উপার্জন এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ করা দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত। আল্লাহ তাআলা হালাল পথে জীবিকা অর্জনকারী বান্দার দোয়া সহজে কবুল করেন।
  3. নামাজের পর এবং নির্দিষ্ট সময়ে দোয়া করা: ইসলামে উল্লেখিত কিছু সময় দোয়া করার জন্য বিশেষভাবে বরকতময়। যেমন:
    • ফজরের পর
    • জুমার দিনে
    • তাহাজ্জুদের সময়
    • মাগরিবের আজানের পর
    • রোজার সময় ইফতারের পূর্বে
  4. আল্লাহর নামসমূহ দিয়ে দোয়া শুরু করা: আল্লাহর ৯৯টি নাম বা “আসমা-উল-হুসনা” ব্যবহার করে দোয়া শুরু করা একটি শক্তিশালী পদ্ধতি। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মাধ্যমে দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হয়।
  5. অতীন্দ্রিয়ভাবে এবং ধৈর্যের সাথে দোয়া করা: দোয়া করতে হবে একনিষ্ঠভাবে, মন থেকে, আল্লাহর কৃপা কামনা করে এবং ধৈর্য সহকারে।
  6. বারবার দোয়া করা: দোয়া যদি কবুল না হয়, তবে বারবার করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বারবার দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে বান্দার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়ে দোয়া কবুল করেন।
  7. নিজের ও অন্যের জন্য দোয়া করা: শুধুমাত্র নিজের জন্য না, বরং অন্যের জন্যও দোয়া করা উচিত। হাদিসে এসেছে, যখন কেউ অন্যের জন্য দোয়া করে, তখন ফেরেশতারা সেই ব্যক্তির জন্যও একই দোয়া করে।

শেষ কথা:

দোয়া একটি শক্তিশালী ইবাদত এবং এটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ধৈর্য এবং নিষ্ঠা দিয়ে করতে হয়। আল্লাহ কখন, কীভাবে এবং কোন অবস্থায় দোয়া কবুল করবেন, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে যারা সঠিকভাবে, নিষ্ঠার সাথে এবং পাপ থেকে মুক্ত থেকে দোয়া করে, আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।

About ফাহাদ মজুমদার

Check Also

কোরবানির পশুর যে ৭টি অংশ খাওয়া হারাম

কোরবানির পশুর যে ৭টি অংশ খাওয়া হারাম, এমন কোন নির্দিষ্ট হাদিস বা কোরআনের আয়াত নেই। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *