বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে উচ্চমূল্য: দুর্নীতি ও বাজারের নৈরাজ্য: সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে উচ্চমূল্য: দুর্নীতি ও বাজারের নৈরাজ্য: সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীরা

আওয়ামী লীগের শেষ মেয়াদে উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্যের ওপর একটি কর আরোপ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোর নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়ে কম্পিউটার বিক্রেতারা সব ধরনের ডিভাইসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

মূলত, আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহার করি, সেগুলোর ওপর কোনো কর আসেনি। এই কর কেবল গেমিং পিসির মতো উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতির ওপরই কার্যকর হয়েছিল। তবে, সেই করের অজুহাতে রায়ান্স, ড্যাফোডিল এবং অন্যান্য সব কোম্পানিই সব পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরকারের এমন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। যখন ফ্রিল্যান্সিং খাতটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন তৃতীয় বিশ্বের এই নির্বোধ সরকার উপলব্ধি করবে যে হঠাৎ করে এই খাতের রেমিট্যান্স প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেল কেন।



প্রযুক্তি পণ্যের উপর কর এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া

 

সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চমানের কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ওপর নতুন করে কর আরোপের ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে, এই কর কেবল নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর সীমাবদ্ধ থাকলেও অনেক কম্পিউটার বিক্রেতা এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ তাদের এখন সাধারণ ব্যবহারের জন্যও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। এই অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির পেছনের মূল কারণ হলো স্বচ্ছতার অভাব এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি। যখন একটি নতুন কর বা শুল্ক আরোপ করা হয়, তখন তা সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এক্ষেত্রে, বিক্রেতারা নির্বিঘ্নে তাদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চলেছে, যা ভোক্তা সুরক্ষার নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এর ফলে, সাধারণ মানুষ যারা প্রযুক্তি পণ্য ক্রয় করতে চান, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটি কেবল ব্যক্তিগত ক্রেতাদের জন্যই নয়, ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি বাধা তৈরি করছে, যারা তাদের দৈনন্দিন কাজে কম্পিউটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

ফ্রিল্যান্সিং খাত: একটি সম্ভাবনাময় খাত থেকে সংকট

 

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ফ্রিল্যান্সিং খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু সরকারের নতুন নীতিমালা এবং পদক্ষেপের ফলে এই খাত এখন হুমকির মুখে। বিশেষ করে, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রণোদনা (incentive) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও কাগজে-কলমে এই প্রণোদনার ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান, বাস্তবে কোনো ব্যাংক এখন আর তা প্রদান করছে না। এর ফলে, ফ্রিল্যান্সাররা তাদের আয়ের একটি অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের কাজ করার আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।



ফ্রিল্যান্সারদের জন্য উচ্চমানের কম্পিউটার যন্ত্রাংশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গেমিং পিসির মতোই উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার তাদের পেশাদার কাজের জন্য অপরিহার্য, যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। নতুন কর আরোপের ফলে এই ধরনের যন্ত্রপাতির দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষে এই খাতে প্রবেশ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি দেশের ভবিষ্যৎ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে এই খাত থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

ভবিষ্যতের ভাবনা: সরকারের ভূমিকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

 

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। প্রথমে, ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা বাজারের অনিয়ম ও মূল্যবৃদ্ধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিক্রেতারা যাতে অনৈতিকভাবে দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য কঠোর মনিটরিং এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ফ্রিল্যান্সিং খাতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর উন্নয়নে নতুন করে বিনিয়োগ এবং প্রণোদনা দিতে হবে। ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে এবং ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দিতে হবে।



এছাড়াও, সরকার প্রযুক্তি খাতকে সহজলভ্য করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। উচ্চমানের প্রযুক্তি পণ্যের ওপর কর কমানো অথবা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এমন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি খাতে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হবে। যদি সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনই সচেতন না হয়, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর ধ্বংস হয়ে গেলে এর ক্ষতি কেবল রেমিট্যান্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা দেশের ডিজিটাল অগ্রগতির গতিকেও মন্থর করে দেবে।

দেশের প্রযুক্তি বাজারকে স্থিতিশীল এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতকে শক্তিশালী করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সময় থাকতে সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এর জন্য বড় মূল্য দিতে হতে পারে।



এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করেন, সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

About মোঃ আল মাহমুদ খান

Check Also

জুলাই আন্দোলন নিয়ে তদন্তে জানা গেছে, শীর্ষ নেতারা নৃশংস দমন-পীড়নের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন – জাতিসংঘ

গত বছর বাংলাদেশে গণবিক্ষোভ দমনের ঘটনায়, যা দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, মাত্র ৪৬ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *