সব চরিত্র কাল্পনিক

সব চরিত্র কাল্পনিক

ইস্…. এখনো অনেক কাজ পড়ে আছে। হাতে মাত্র ৩/৪ দিন। বাসায় গেস্ট আসবে। আর ঘর দুয়ার এখনো ময়লা….অগোছালো। সারাদিন কাজ করলেও দিন শেষে মনে হয় যেন কিছুই করিনি। এখনো সব কাজ বাকি। উফ্….আজ আর পারবো না। বাকিটা কাল। এখন ঘুমাবো। শুয়ে শুয়ে ভাবছি….কাল খাটের নিচের ওই পুরনো বস্তা বস্তা ভর্তি বই গুলো সাফ সাফাই করতে হবে। ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে আসলো টেরি পেলাম না। সকাল হতে না হতেই মার চিল্লা চিল্লিতে ঘুম ভাঙলো। উঠে দাঁত ব্রাশ করে একটা রুটি আর এক কাপ চা খেয়ে কাজে লেগে গেলাম। ৪ টা বড় বড় বস্তা ভর্তি বই। একটা একটা করে খুলতে লাগলাম। বাবা মেয়ের সেই অনার্সের ৪/৫ টা বই আর আমার পুরোনো বাংলা আর ইংলিশ গ্রামার বইয়ের সংখ্যায় বেশি। আরো আছে শরৎ চন্দ্রের শ্রীকান্ত…. নজরুল এর অগ্নিবীণা… রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা….. । এগুলো বাবার খুব প্রিয় বই । আমার বই রাখার জায়গা হচ্ছিল না । তাই মা এগুলো বস্তা ভরে রেখে দিয়েছে। সব গুলো বস্তা খুলে সুন্দর করে ধুলো ঝেড়ে ঝেড়ে রাখছিলাম। হটাত একটা পুরোনো ডায়েরি দেখে অবাক হলাম। আমার মা বাবার ডায়েরি লেখার অভ্যাস কখনোই ছিল না। আমি টুক টাক লেখি। তবে ওটা আমার ডায়েরি নয়। খুব পুরোনো একটা ডায়েরি… উপরে লেখা ১৯৯২!

স্ট্রেঞ্জ!! এতো আমার জন্মের আগের ডায়েরি। ভাবলাম খুলে দেখবো। কিন্তু রান্না ঘর থেকে মার গলা শুনলাম… “”মিতা…. তারা তাড়ি কর… রান্না হয়ে গেছে… খাবি তো…।”” ওহ…. আমার নাম সুস্মিতা চক্রবর্তী।   Sculpture department 3rd year। মার ডাক শুনে ডায়েরি টা আলাদা করে রেখে বাকি বই গুলো আবার আগের মত গুছিয়ে রেখে দিলাম।  দিন শেষে কাজ সেরে shower নিয়ে বিছানায় গেলাম। বাসায় সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমিও খুব ক্লান্ত। তবে ক্লান্তির থেকে কৌতুহলটা বেশি কাজ করছে। বালিশের নিচ থেকে ডায়েরিটা বের করলাম। ডায়েরির উপরটা ধূসর রঙের ছিল একসময় । তবে সেটা এখন আর ঠিক ধূসর নেই। ময়লা আর পুরোনো হয়ে গেছে। খুব আগ্রহ নিয়ে ডায়েরিটা খুললাম। পৃষ্ঠা গুলো হলুদ হলুদ হয়ে গেছে হালকা।প্রথম পৃষ্ঠাতে দেখলাম একটা বড় লাল টিপ লাগানো। মনে হচ্ছে কোনো মেয়ের ডায়েরি।  আরেকটা পৃষ্ঠা উল্টালাম। লেখা আছে ” স্মৃতির পাতা ”

আরেকটা পৃষ্ঠা উলটালাম।

”  আমি সুব্রত। ফিজিক্স ১ম বর্ষ। আগে কখনো ডায়েরি লিখিনি। কিন্তু আজ ক্রিকেট ম্যাচ এর পর থেকে ডায়েরি লিখতে খুব ইচ্ছা করছে। আসলে  দর্শকের সারিতে একটি মেয়েকে দেখলাম। খুব সাধারণ একটা শাড়ি পড়া। খুব সরল সহজ দুটি চোখ ভর্তি কাজল। খুব একটা স্মার্ট না। তবে কেনো জানি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো। যার ফল স্বরূপ সবার  এক্সপেক্টেশন এ ছাই দিয়ে ১০ রান করেই আউট হয়ে গেলাম। ঠিক ইচ্ছে করে হয়নি। ভেবেছিলাম মেয়েটার সামনে একটু ভালো খেলে একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। কিন্তু ও এতটাই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল যে আমার পক্ষে ঠিক করে খেলার দিকে কনসেন্ট্রেশন করা সম্ভব হয়নি। যাক। কি আর করা। ভাবলাম মাঠ থেকে গিয়ে মেয়েটার সাথে পরিচিত হবো। কিন্তু আমি যাওয়ার আগেই সে কোথায় যেনো হাওয়া হয়ে গেলো। একেবারেই দেখতে পেলাম না। এই অচেনা মেয়েটার জন্যই বোধয় আজ ডায়েরি লেখার সাধ জেগেছে।   ১০ জুলাই, ১৯৯২”

ওহ ম্যাই গড। এটা কার ডায়েরি!! অদ্ভুত …. সুব্রত কে? আর তার ডায়েরি আমাদের ঘরে কি করে এলো? আশ্চর্য!!! বাবা কে জিগাশা করবো? নাহ্। আগে পড়ে দেখি । খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। ঠিক তামিল মুভির গল্পের মতো। বাট আজকে আর না। এখন একটু ঘুমানো দরকার।

লেখকঃ রিফাত

About ফাহাদ মজুমদার

Check Also

আমস্টারডামে ইসরায়েলি ফুটবল ভক্তদের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষ

আমস্টারডামের সিটি কাউন্সিলের একজন সদস্য বলেছেন, ‘মাকাবি হুলিগানরাই’ প্রথমে সহিংসতার সূচনা করে এবং ফিলিস্তিনপন্থী সমর্থকদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *