গর্ভাবস্থায় বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে কী করনীয়?

গর্ভাবস্থায় শিশুর সঠিক পজিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রসবের সময়। সাধারণত, শিশুর মাথা নিচের দিকে থাকে, যাকে cephalic বা vertex পজিশন বলা হয়। কিন্তু অনেক সময় বাচ্চা উল্টো অর্থাৎ পা বা নিতম্ব নিচে এবং মাথা উপরে থাকে, যাকে ব্রিচ পজিশন বলা হয়। প্রায় ৩-৪% গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে এই ব্রিচ পজিশন দেখা যায়।

ব্রিচ পজিশনের প্রকারভেদ

১. ফ্র্যাঙ্ক ব্রিচ: যখন শিশুর পা উরুর সাথে লাগানো থাকে এবং নিতম্ব নিচের দিকে থাকে। ২. কমপ্লিট ব্রিচ: যখন শিশুর পা এবং নিতম্ব দুটোই নিচের দিকে থাকে। ৩. ফুটলিং ব্রিচ: যখন শিশুর একটি বা দুটি পা প্রসবের সময় প্রথমে বেরিয়ে আসে।

ব্রিচ পজিশনের কারণ

শিশুর উল্টো পজিশন বা ব্রিচ পজিশনের বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে, যেমন:

  • মাতৃ জরায়ুর আকার বা আকৃতি সমস্যা
  • আগের প্রসবে বাচ্চার পজিশনের সমস্যা
  • জরায়ুর ভিতরে কোনো টিউমার বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
  • জন্মগত কিছু শারীরিক সমস্যা
  • একাধিক গর্ভাবস্থা (যমজ বা ত্রিপলেট)

ব্রিচ পজিশনের ঝুঁকি

ব্রিচ পজিশন প্রসবের সময় কিছু জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে:

  • প্রসবের সময় শিশুর শরীর এবং মাথার প্রস্থান একসাথে না হওয়া
  • পেটের মধ্যে শিশুর হাত, পা, বা নিতম্ব আটকে যেতে পারে
  • অক্সিজেনের স্বল্পতা হতে পারে
  • সিজারিয়ান প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়

কী করনীয়

গর্ভাবস্থায় শিশুর পজিশন উল্টো হলে মায়ের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন:

১. এক্সটার্নাল সেফালিক ভার্সন (ECV)

এটি একটি চিকিৎসাগত পদ্ধতি যেখানে ডাক্তার শিশুর অবস্থান ঠিক করতে বাইরে থেকে হালকা চাপ দিয়ে শিশুকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। তবে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, এবং কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন:

  • জরায়ুর ফেটে যাওয়া
  • প্লাসেন্টা থেকে রক্তক্ষরণ
  • শিশুর হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া

২. প্রসবের সময় সিজারিয়ান

যদি শিশুর পজিশন উল্টো থাকে এবং ECV সফল না হয়, তখন সিজারিয়ান প্রসবকে বেছে নেয়া হয়। সিজারিয়ান প্রসব ঝুঁকিহীন নয়, তবে শিশুর নিরাপত্তার জন্য অনেক সময় এটি সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

৩. ব্যায়াম

কিছু মৃদু ব্যায়াম গর্ভবতী মায়ের শিশুর অবস্থান সঠিক করতে সহায়ক হতে পারে। কিছু ব্যায়াম নিম্নরূপ:

  • ব্রিজ পোজিশন: মায়ের পিঠে শুয়ে, পা ভাঁজ করে, এবং শরীরের নিচের অংশ উপরের দিকে তোলা।
  • ব্রিথিং এক্সারসাইজ: নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শিশুর অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা।
  • হাঁটু-এলবো পোজিশন: মাটি বা বিছানায় হাঁটু এবং কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে কিছুক্ষণ থাকা।

৪. আকুপাংচার এবং ম্যাসাজ

কিছু মায়ের ক্ষেত্রে আকুপাংচার এবং ম্যাসাজের মাধ্যমে শিশুর পজিশন পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তবে এই ধরনের পদ্ধতিগুলি পরীক্ষিত নয় এবং সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।

৫. নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করানো এবং আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। যদি শিশুর পজিশন উল্টো থাকে তবে ডাক্তার যথাযথ পরামর্শ দিতে পারবেন।

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার পজিশন উল্টো থাকলে তা নিয়ে মায়েদের চিন্তিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে সঠিক সময়ে ডাক্তারি পরামর্শ নিলে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে অনেক সময় শিশুর অবস্থান ঠিক করা সম্ভব।

About ফাহাদ মজুমদার

Check Also

আমস্টারডামে ইসরায়েলি ফুটবল ভক্তদের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষ

আমস্টারডামের সিটি কাউন্সিলের একজন সদস্য বলেছেন, ‘মাকাবি হুলিগানরাই’ প্রথমে সহিংসতার সূচনা করে এবং ফিলিস্তিনপন্থী সমর্থকদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *