২০২৫ সালের ২১ জুলাই, ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাঙ্গণে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি চীনা নির্মিত F‑7 BGI প্রশিক্ষণ জেট বিধ্বস্ত হয়ে ৩১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। নিহতদের মধ্যে প্রায় ২৫ জন ছিল ১২ বছরের কম বয়সী বলে জানা গেছে (রয়টার্স প্রতিবেদন অনুযায়ী)।
সোমবার সকাল ৯টা ১২ মিনিটে বিমানটি রাজধানীর উত্তরের একটি বিমান ঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশনে ওড়ে। উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভবনে আছড়ে পড়ে। এতে সঙ্গে সঙ্গেই পাইলটসহ স্কুলে থাকা শিশু ও শিক্ষকেরা নিহত হন।
ঘটনার পরদিন সকাল থেকেই ঢাকায় এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। প্ল্যাকার্ড হাতে তারা রাস্তায় নামে, স্লোগান তোলে—“আমার ভাই কেন মারা গেল?”, “পুরাতন যুদ্ধবিমান বাতিল করো”, “আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”
তারা সরকারের কাছে চার দফা দাবি তোলে:
নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ
পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান
পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল
জনবসতির ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান ও প্রশিক্ষণ ফ্লাইট নিষিদ্ধ
সচিবালয়ের সামনের প্রধান গেটে শিক্ষার্থীরা প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড প্রয়োগ করে। সংঘর্ষে প্রায় ৬৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়, যাদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১৬৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রাথমিকভাবে জানায় যে এটি একটি “দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা” এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তারা ঘোষণা দেয়, জনবসতির ওপর প্রশিক্ষণ ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে এবং পুরাতন বিমানগুলোর কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘটনাটিকে “জাতীয় বিপর্যয়” বলে ঘোষণা করে। এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয় এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। প্রশাসন জানায়, “কারা দায়ী তা বের করতে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন তদন্ত হবে।”
উল্লেখযোগ্য যে, গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং বর্তমানে একটি অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই দুর্ঘটনা তাদের ওপর জনচাপ আরও বাড়িয়েছে।
এই ঘটনার ঠিক এক মাস আগে ভারতের গুজরাটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানি ঘটে, যা দশকের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বিমান দুর্ঘটনাগুলোর একটি ছিল।
মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের এই হৃদয়বিদারক ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং তা দেশের নিরাপত্তা, সামরিক প্রস্তুতি এবং জননিরাপত্তা নীতির উপর বড় প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুধু শোক প্রকাশ নয়, এটি একটি আত্মজাগরণও—যেখানে তরুণ প্রজন্ম তাদের প্রাণের মূল্য এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা চাইছে।
সরকার ও সামরিক কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নয়তো, এই রক্ত শুধু রাস্তায় নয়—রাষ্ট্রব্যবস্থার গায়ে লেগে থাকবে চিরকাল।