দাবানল ও মানুষের সৃষ্ট আগুনে পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস, মহাবন অ্যামাজন!

দাবানল ও মানুষের সৃষ্ট আগুনে পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস, মহাবন অ্যামাজন!

অ্যামাজন রেইনফরেস্ট মহাবিপদে পড়েছে! পারতপক্ষে এই বন আমাদের চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর এটা শুধু গাছ কেটে ফেলার জন্যই হচ্ছে না, বরং তার সাথে যুক্ত হয়েছে দাবানল আর মানুষের সৃষ্ট আগুন। এই দিনগুলোতে রেইনফরেস্টি জলছে আগুনে।

explosion fire forest nature 123690অ্যামাজন পৃথিবীর সব থেকে বড় রেইন ফরেস্ট। লক্ষ লক্ষ প্রজাতির থাকার স্থান এই বন। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের প্রায় ২০% অক্সিজেন আসে এই বন থেকে আর এ কারনে অনেক বিজ্ঞানীরা এই বন’কে পৃথিবীর ফুসফুস বলে অভিহিত করেন।

আর এখন এই ফুসফুসের শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা প্রজন্ম ধরে অ্যামাজনের ছোট ছোট অংশ পুড়িয়ে কৃষি জমি তৈরি করে আসছে। আর বিগত বছরগুলোতে এভাবে পুড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞাও শিথিল হয়ে গিয়েছে!

এছাড়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নিজেও বন নিধনের সাথে যুক্ত ছিলেন। অ্যামাজন যখন আগুনে পুড়ছে, এই সময় তিনি কমেডি ক্লাবে সময় কাটাতে যান এবং জোর দিয়ে বলেন এই আগুন অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিরো বলে আক্ষা দেয়া হয় যে বন পোড়ার সময় বাশি বাজাচ্ছিল! তিনি এই খেতাব অস্বীকার করে বলেন তিনি বন নিধনের পক্ষে নন।

এর আগেও তিনি বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের জন্য সমালোচনার স্বীকার হয়েছে। সম্প্রতি তিনি মিডিয়ার সামনে বেশ কিছু নোংরা শব্দ ব্যবহার করেন, এবং দেশের মানুষকে কম মলত্যাগ করতে বলেন। তার কথানুযায়ী মলত্যাগ করা কমিউনিস্ট লীডারদের কাজ।

এছাড়া তিনি বন রক্ষাকারী আইনগুলোর ব্যপারেও বিরুপ মন্তব্য করে বলেন যে ব্রাজিল পরিবেশগত সাইকোসিসে ভুগছিল যা ব্রাজিলের উন্নতির পথে বাধা হয়েছিল। তার ভাষ্যানুযায়ি, বন না পোড়ালে কৃষি জমি আসবে কোথা থেকে, গরুই বা কোথায় চড়ানো হবে। তিনি এনজিও গুলোকে দোষ দেবার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদের দোষ দেইনি, আমার তাদেরকে সন্দেহ হয়।

para tmo 2019231

জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে করা ২৫তম কনফারেন্সটি ছিল মূলত ব্রাজিলকে নিয়েই, কিন্তু দেশটি এতে অংশ নেয়নি।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসেনারো ক্ষমতায় এসে বন রক্ষাকারী আইনে শিথিলতা আনার পর সব কিছুতে এসেছে ব্যপক পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞরা বলেছে ২০১০ সালের পর থেকে ২০১৯ সালে এসে তা অত্যন্ত তিব্র আকার ধারন করেছে। মানূষের দেয়া আগুনে বিপদাপন্ন হচ্ছে মহাবন অ্যামাজন এবং সমগ্র পৃথিবী। এই ধ্বংসযজ্ঞ মহাকাশ থেকেও দেখা যাচ্ছে।

বিশাল অগ্নি শিখা দেখা গেছে মহাকাশে নাসার এবং নোয়া’ স্যাটেলাইটগূলো থেকে। নাসা’র ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই) অনুসারে আগুন লাগার ঘটনা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে! মহাকাশ সংস্থাটি জানিয়েছে জানুয়ারি ২০১৯ থেকে তারা ৭২,০০০ এরও বেশি আগুনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে।

এই আগুন বনের পুরো বাস্তুসংস্থানকেই ধ্বংস করছে, বিপন্ন করছে অসংখ্য প্রজাতি, একই সাথে বায়ুমন্ডলে নির্গত হচ্ছে কার্বন এবং গ্রিন হাউজ গ্যাস সমূহ। একই সাথে বিশাল ধোয়ায় ঢাকা পড়ে যাওয়ায় বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যার অর্থ রেইনফরেস্টটি আরও আদ্রতা হারিয়ে দাহ্য হয়ে উঠছে, ফলে আগামীতে বেড়ে যাবে আগুনের প্রবলতাও। অর্থাৎ এর ফলে সমস্যা আরও প্রবলতর হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের পূর্বের ধারনার থেকেও ধীরে ধীরে অ্যামাজনের গাছগুলো বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ৪ ইঞ্চির বড় গাছগুলোর প্রায় অর্ধেক সংখ্যকই প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরোনো, কিছু রয়েছে হাজার বছর ধরে, অর্থাৎ এদের একাংশের বয়স এক হাজার বছরেরও বেশি!

একই সাথে যে পরিবেশে গড়ে উঠেছিল এর বিশাল বিশাল গাছগুলো তা আর নতুন করে পাওয়া সম্ভব হবেনা। পূর্বের সেই পরিবেশ এবং অবস্থা না থাকার কারনে সেই একই ধরনের গাছ নতুন করে লাগানো বা বংশ বিস্তার করাও সম্ভব হবেনা। অর্থাৎ পুরো পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে নিঃশ্বাসের জন্য অক্সিজেন প্রদানকারী এই গাছগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যামাজন এমন এক সীমায় এসে পড়েছে, এই সীমা অতিক্রম করার পর পৃথিবীর ফুসফুস’কে আর বাচানো সম্ভব হবেনা।
অ্যামাজনের আগুন লাগার মর্মান্তিক এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। আলোড়ন তুলেছে মানূষের মনে।

আন্তর্জাতিকভাবে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। দক্ষিন আমেরিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাজিলের দূতাবাসের সামনে শত শত মানূষ বিক্ষোভ করছেন। একই সাথে ক্ষমতাশালী দেশগুলো থেকে ব্রাজিল সরকারের উপর চাপ বাড়ছে।

বিশ্ব নেতারা ব্রাজিলকে ‘আত্মহত্যার’ পথ থেকে সরে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন, এই বনে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা মানব জাতির জন্য আত্মহত্যারই শামিল।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমেনুয়েল ম্যাক্রন ইস্যুটি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য এ সপ্তাহের জি-সামিটে তুলবেন বলে জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রবল চাপের মুখে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্রাজিলের সেনাবাহিনী নামানো হতে পারে। এবার রেকর্ড সংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে এবং তার বেশিরভাগই হয়েছে এই দুই সপ্তাহ জুড়ে।

তথ্য উৎস- ইন্টারনেট

About ফাহাদ মজুমদার

Check Also

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজু

মালদ্বীপের রাজনীতিতে মোহামেদ মুইজু এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *