মহাকাশের রহস্যময় এক বিশাল খাদ বেয়োটিস ভয়েড

২০০৪ সালে বিশেষজ্ঞরা ‘ডাব্লিউ এম এ পি’ নামের একটি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষন করার সময় অদ্ভদ একটি ব্যপার লক্ষ করেন । মহাকাশের কিছু অংশ অন্যান্য অংশের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা ! তারা এসব অঞ্চলের নাম দেন ঠান্ডা অঞ্চল ‘কোল্ড স্পট’ । আর বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি এর উপস্থিতির কারন ।

375px

সাম্প্রতিক গবেষনায় আর এই কোল্ড স্পট’এ পদার্থের উপস্থিতি যতটুকু থাকার কথা তার থেকেও অস্বাভাবিক রকমের কম ! এটি খুজে পাওয়া গিয়েছিল কসমিক মাইক্রো ওয়েভ ব্যাকগ্রাঊন্ড এর ম্যাপে , সংক্ষেপে সি এম বি ‘তে । আর সি এম বি হচ্ছে, বিগ ব্যাং এর ৩৭৮০০০ বছর পর যে শক্তি রয়ে গেছে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ।

screen shot 2016 10 18 at 10.37.34

বিগ ব্যাং এর পর মহাবিশ্ব শুধু আর ঘন হাইড্রোজেন প্লাজমার কুয়াশা হিসেবেই থাকেনি বরং তা রুপান্তরিত হয়েছিল নিউট্রাল পরমাণুতে যা তাপ বিকিরন করে । অনেকে আবার এমন কথাও বলেছেন যে হয়তো এই কোল্ড স্পট গুলো আসলে সত্যি নয় বরং তা পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ভুল ।

অধিকাংশ মডেলেই দেখা যায় যে মহাবিশ্ব অনেক টা ফোমের টুকরোর মতো করে সাজানো । যার কিছু কিছু অংশে দেখবেন যে ছোট ছোট গর্ত রয়েছে । কিছু অংশে পদার্থ এসে জড়ো হবার কারণে অন্য অংশ গুলোতে পদার্থের ঘনত্ব কম হয় । এই অংশ গুলোকে বলে ভয়েড ।

তবে এই ভয়েড গুলো তুলনামুলক ভাবে অনেক ছোট । আর যে কোল্ড স্পটের কথা আগে বলা হয়েছে তা যদি কোন ভয়েডের কারনে হয়ে থাকে তাহলে সেই ভয়েড টিকে হতে হবে অচিন্তনীয় রকমের বড়, এক কথায় সুপার ভয়েড । বিশেষজ্ঞদের কাছে এর অস্তিত্ত সম্ভব বলেই মনে হয়নি ! মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা হিসেব করলে এরকম সুপার ভয়েডের উপস্থিতি পুরোপুরি অসম্ভব বলেই মনে হয়।

প্রায় 330 মিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাস সম্পন্ন (পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসের প্রায় ০.২৭%), বা ভলিউমে প্রায় ২৩৬,০০০ এমপিসি৩, বেয়োটীস ভয়েড মহাবিশ্বের বৃহত্তম ভয়েড গুলির মধ্যে একটি, এবং একে সুপার ভয়েড হিসেবে বলা হয়। এটি আবিষ্কার করেন রবার্ট কার্শনার (১৯৮১) গ্যালাকটিক রেডশিফ্টগুলির সমীক্ষার অংশ হিসাবে। বোয়েটস ভয়েডের কেন্দ্র পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।

অন্যান্য জ্যোতির্বিদরা শীঘ্রই আবিষ্কার করেন যে ভয়েডটিতে বেশ কয়েকটি ছায়াপথ রয়েছে। ১৯৮৭ সালে, জে মোডি, রবার্ট পি, কার্শনার, জি ম্যাক আল্পাইন এবং সেন্ট গ্রেগরী এই ছায়াপথে ৮টি গ্যালাক্সি খুজে পাবার কথা প্রকাশিত করেন। একই সাথে ১৯৮৮ সালে এম স্ট্রাউস এবং জন হাউছর’ আরও তিনটী গ্যালাক্সি খুজে পাবার কথা ঘোষনা করেন।

জ্যোতির্বিদ গ্রেগ অল্ডারিংয়ের মতে শূন্যতার মাত্রাটা এতটাই সুবিশাল যে “যদি মিল্কিও এই ভয়েডের কেন্দ্রে থাকত তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত আমরা অন্য ছায়াপথের উপস্থিতিই জানতে পারতাম না।

সমস্যা হল বেয়োটিস ভয়েডটি নিতান্তই খুবই বড়। ভয়েডগুলি আকারে বৃদ্ধি পাবার কারণ তাদের প্রান্তগুলির মধ্যাকরষন বল তাদের কেন্দ্রের যে কোনও কিছুর মাধ্যাকর্ষণ বলের চেয়ে অত্যন্ত বেশি। কিন্তু মহাবিশ্বের বেয়োটিস ভয়েডের মত এত বড় ভয়েড তৈরি হবার মত করার মতো বয়স এখনও হয়নি।

এর একটি ব্যখ্যা পাবার জন্য আমাদেরকে ১৯৯৮ সালের ডার্ক এনার্জি আবিস্কার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় যে শক্তি মহাবিশ্বকে ক্রমাগত ফু দিয়ে বেলুন ফুলানোর মত সম্প্রসারিত করছে।

তথ্য উৎস- ইন্টারনেট

About ফাহাদ মজুমদার

Check Also

বাতের ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা

বাতের ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের উন্নত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চিকিৎসার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *